Home » MAWblog » International » আন্তর্জাতিকভাবে চলমান বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট ও স্যাংশন (BDS) আন্দোলনের গুরুত্ব
International
19-05-2025
বিশ্ব ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ ও অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলন হয়েছে—মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ থেকে শুরু করে নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রাম। তেমনই একটি বিশাল ও বিস্তৃত আন্দোলন হচ্ছে BDS আন্দোলন, যার পূর্ণরূপ হলো:
Boycott, Divestment and Sanctions—বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ প্রত্যাহার) এবং নিষেধাজ্ঞা।
এই আন্দোলনটি মূলত ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষায়, ইসরায়েলের বর্ণবাদী ও দখলদার নীতির বিরুদ্ধে গঠিত হয়েছে। আজ, ৭০টিরও বেশি দেশে সক্রিয় এই আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই ব্লগে আমরা জানব:
- BDS আন্দোলনের ইতিহাস ও উদ্দেশ্য
- কীভাবে এটি কাজ করে
- আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন
- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব
BDS আন্দোলনকী?
BDS আন্দোলন হলো একটি অ-হিংসাত্মক, জনভিত্তিক আন্দোলন, যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে।
এটি ২০০৫ সালে ১৭০টিরও বেশি ফিলিস্তিনি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়। তারা দাবি করে যে, ইসরায়েল:
- আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে
- ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে বসতি স্থাপন করছে
- গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে
- এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি বর্ণবাদী নীতি প্রয়োগ করছে
এই আন্দোলনের তিনটি মূল উপাদান হলো:
১। Boycott (বয়কট):
ইসরায়েলি পণ্য, কোম্পানি, শিক্ষাব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার প্রতিরোধ
২। Divestment (ডিভেস্টমেন্ট):
ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা (বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, কর্পোরেট)
৩। Sanctions (স্যাংশন):
সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা
BDS আন্দোলনেরমূলদাবিতিনটি
BDS আন্দোলনের পক্ষ থেকে তিনটি সুস্পষ্ট দাবি করা হয়:
১। ১৯৬৭ সালের দখলকৃত অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার
→ পশ্চিম তীর, গাজা, পূর্ব জেরুজালেম
২। ফিলিস্তিনিদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা (বিশেষত ইসরায়েলের ভেতরে থাকা ২০% আরব সংখ্যালঘুদের)
৩। ১৯৪৮ সালে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা (UN Resolution 194 অনুযায়ী)
BDS আন্দোলনকীভাবেকাজকরে?
BDS একটি কেন্দ্রীয় অফিসবিহীন, নেটওয়ার্কভিত্তিক আন্দোলন। এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়:
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ট্রেড ইউনিয়ন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে
- অনলাইন ক্যাম্পেইন ও স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে
- প্রতিবাদ, জনমত গঠন ও নীতিনির্ধারকদের চাপ প্রয়োগ করে
- University of California, NYU, ও Harvard-এর শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলি সংস্থা থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে
- বিশ্বব্যাপী একাধিক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন Ben & Jerry’s, Airbnb, G4S ইত্যাদি ইসরায়েলি বসতিতে কার্যক্রম বন্ধ করেছে
- অনেক শিল্পী যেমন রজার ওয়াটার্স (Pink Floyd), লরড, ব্রায়ান ইএনো ইসরায়েলি অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন
- দক্ষিণ আফ্রিকার বিশপ ডেসমন্ড টুটু, নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই, প্রখ্যাত লেখক নাওম চমস্কি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রজার ওয়াটার্স সহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তি এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন
- আমেরিকা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া—সবখানেই ছাত্র সমাজের মধ্যে এই আন্দোলন জনপ্রিয় হচ্ছে
- ইসরায়েল সরকার BDS-কে "আস্তিত্বের জন্য হুমকি" বলে বিবেচনা করে
- আমেরিকার বহু রাজ্যে BDS আন্দোলনের সমর্থনে কাজ করলে চাকরি বা সরকারি অর্থায়নে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে BDS সংক্রান্ত কনটেন্টের সেন্সরশিপ বাড়ছে
১। আর্থিক চাপ:
বহু ইসরায়েলি সংস্থা ও পশ্চিমা কর্পোরেট বিনিয়োগ হারিয়েছে। যেমন G4S প্রায় $৩০০ মিলিয়ন হারিয়েছে।
২। চেতনার জাগরণ:
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সচেতনতা বেড়েছে, মিডিয়াতে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।
৩। রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞার আলোচনা:
আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে কিছু ইসরায়েলি বসতিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, যা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
- ইসরায়েলকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি
- বাংলাদেশি পাসপোর্টে "ইসরায়েল ব্যতীত সব দেশে বৈধ" লেখা রয়েছে
- বিশ্ববিদ্যালয় ও তরুণ সমাজের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো
- বাণিজ্যিকভাবে ইসরায়েলি পণ্য শনাক্ত ও বর্জন
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা জোরদার
- নীতি নির্ধারকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ফিলিস্তিনের জন্য আওয়াজ তোলা
- এটি অস্ত্র নয়, বরং নৈতিক চাপের মাধ্যমে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ
- এটি জাতিসংঘের ঘোষিত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত
- এটি বিশ্বজনমতকে সংগঠিত করে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে
"তুমি যদি অন্যায়ের পক্ষে না দাঁড়াও, তাহলে তুমি ন্যায়ের অংশ হয়ে ওঠো।"
উপসংহার: অন্যায়েরবিরুদ্ধেএকটিনৈতিকদায়
BDS আন্দোলন কেবল একটি কৌশল নয়; এটি হচ্ছে বিচার, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের জন্য একটি নৈতিক দায়। ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার হরণ, জমি দখল, বোমাবর্ষণ, শিশু হত্যা—এইসব বাস্তবতায় আজ বিশ্ববাসীর উচিত নীরব না থেকে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো।
এই আন্দোলন প্রমাণ করে, একক মানুষের সচেতনতা, একটি পণ্য না কেনা, একটি বিনিয়োগ প্রত্যাহার, একটি পোস্ট শেয়ার—সবই পারে একটি জাতির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে।
BDS এক প্রতিরোধের নাম—যা গুলি নয়, বিবেক দিয়ে যুদ্ধ করে।
13-05-2025
International
পৃথিবীর ভূস্বর্গ, কাশ্মীর। পৃথিবীর ভূস্বর্গ হিসেবে...
Read More28-04-2025
International
ভূমিকা চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিগত এক দশকে বৈশ্বিক...
Read More17-04-2025
International
‘সেভেন সিস্টারস ভারতের একটা ল্যান্ডলকড অঞ্চল। তাদের...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
International...
24-11-2024
International...
03-10-2024
Miscellaneous...
30-09-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.